অস্ট্রেলিয়া তো তাহলে আরও ভয়ের
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচ ৮ উইকেটে পরাজয়ের সঙ্গে জ্বলন্ত দুটি প্রশ্নও উপহার দিয়েছে।
প্রশ্ন এক: আট ব্যাটসম্যান খেলানোর কি কোনো দরকার ছিল?
প্রশ্ন দুই: মেহেদী হাসান মিরাজকে বসিয়ে রাখাটা কি ভুল হয়েছে?
বাংলাদেশের টিম হোটেলের পাশেই টাওয়ার অব লন্ডন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দর্শনার্থীদের ভিড়। ভেতরে দর্শনীয় অনেক কিছুই আছে। তবে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ রানির মাথার মুকুট। এর একটু দূরেই টেমস নদীর ওপর টাওয়ার ব্রিজ। লন্ডনের প্রতীক বললে বিগ বেন, লাল দোতলা বাসের সঙ্গে যেটি আসে। এই টাওয়ার অব লন্ডন আর টাওয়ার ব্রিজ যেমন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে, ওই প্রশ্ন দুটিও তা-ই। যেকোনো একটা না হলে আরেকটা হয় না। আট ব্যাটসম্যান না খেলালে মিরাজ বসে থাকেন না। মিরাজ খেললে আট ব্যাটসম্যান খেলে না।
নিয়মিত বোলার একজন কম খেলানোর মূল্য কত বড় হতে পারে, ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে সেটির সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরণ হয়ে আছে ১৯৭৯ বিশ্বকাপ ফাইনাল। ইংল্যান্ডের দুই অনিয়মিত বোলার জিওফ বয়কট ও গ্রাহাম গুচের ১০ ওভারে রান উঠেছিল ৬৫। আজকের দিনে এটা এমন কিছু নয়। কিন্তু তখনকার বিচারে রীতিমতো হাতেম তাইয়ের মতো দানসত্র খুলে বসার মতো ব্যাপার।
বাংলাদেশের ম্যাচটার সঙ্গে এটি অবশ্য খুব প্রাসঙ্গিক হচ্ছে না। বাংলাদেশের অনিয়মিত বোলাররা ১০.২ ওভারে ৭৩ রান দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ দল পরাজয়ের যে ময়নাতদন্ত করেছে, তাতে এটির প্রায় উল্লেখই থাকছে না। থাকলেও একেবারে নিচের দিকে। সেখানে এক, দুই এবং তিন নম্বরে থাকছে ব্যাটিংয়ে অন্তত ৩০-৩৫ রান কম হওয়া।
বাংলাদেশের ৩০৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজেদের সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও। সেটিও যে বড় পরাজয় ছাড়া আর কিছু দিতে পারল না, এর কারণ এটা ওয়ানডে ক্রিকেটের নতুন পৃথিবী। যেখানে তিন শ তাড়া করতে নামার আগে একবারও কোনো দলের মনে হয় না, এটা কীভাবে সম্ভব!
পরশু ম্যাচ শেষে হোটেলে ফেরার পর লিফটে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে দেখা। সুইমিং করে ফিরছেন। ফুলহাতা টি-শার্টটা উল্টো করে পরা। পরাজয়ের দুঃখে এতটাই আনমনা হয়ে গেছেন! মুশফিক ভুলটা শুধরে দিলেন, ‘ঘেমে গিয়েছিলাম তো, ইচ্ছা করেই উল্টো করে পরেছি।’ বাংলাদেশের রানটা যে চাহিদামতো হলো না, সেটির একটা বড় কারণ পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যান তামিম ও মুশফিকের আউট হয়ে যাওয়া। মুশফিকও তা মানছেন, তবে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, তাঁর না মেরে উপায় ছিল না, ‘আমি তো বুঝতে পারছিলাম, এই উইকেটে ৩৪০ না করলে হবে না।’ ওভালের উইকেটে কি বোলারদের তাহলে কিছুই করার নেই? ‘৯০-৯৫ মাইল গতির বোলার থাকলে হয়তো কিছু করতে পারে। ওরা বাউন্সার দিলেও বড়জোর ২ রান হবে। আমাদের দলে তো এমন বোলার নেই।’
ওভালের ম্যাচ শেষে সঞ্জয় মাঞ্জরেকার নাসের হুসেইনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাংলাদেশ ৩০০ করে ফেলার পর কি একটু চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলে?’ হুসেইন উত্তর দিলেন, ‘দশ বছর আগে হলে চিন্তায় পড়তাম। এখন ওয়ানডেতে তিন শ চেজ করা কোনো ব্যাপার না। আগের ইংল্যান্ড হলেও হয়তো চিন্তায় পড়তাম।’
এই ইংল্যান্ড কেমন, গত জুনে এই মাঠে ঠিক আগের ম্যাচটাই এর প্রমাণ। শ্রীলঙ্কাও ৩০৫ রানই করেছিল। ইংল্যান্ড তা মাত্র ৪০.১ ওভারেই পেরিয়ে যায়। সেই জয়ের নায়কের বিশাল একটা ছবি ঝুলছে ওভালে। ১১৮ বলে ১৬২ করেছিলেন, গত পরশু অবশ্য সাম্প্রতিক ব্যর্থতার ধারা বজায় রেখে একটু আশা দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। ব্যাটসম্যানের নাম জেসন রয়।
সেই ম্যাচটার কথা মনে আছে বলেই কিনা, বাংলাদেশের এক ব্যাটসম্যান বললেন, ‘আমরা ৩৫০ করলেও কিছু আসত যেত না। ওরা তখন আরও আগে মার শুরু করত।’ কথাটা খুব অযৌক্তিক নয়। ২০১৫-এর জুনেই নিউজিল্যান্ডের ৩৪৯ মাত্র ৪৪ ওভারেই টপকে গিয়েছিল ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ড নিয়ে আর গবেষণা করে কী হবে! সুধীন্দ্রনাথ দত্ত তো সেই কবেই লিখেছেন, ‘ফাটা ডিমে আর তা দিয়ে কী ফল পাবে?/ মনস্তাপেও লাগবে না ওতে জোড়া।’ ইংল্যান্ড এখন ‘ফাটা ডিম’, আগামী মঙ্গলবার সামনে অস্ট্রেলিয়া। এই ওভালেই খেলা। ইংল্যান্ড ম্যাচের ময়নাতদন্তে যা উঠে আসছে, তাতে অবশ্য অস্ট্রেলিয়া আরও ভয়ের কারণ। জয়ের পূর্বশর্ত যদি ৩৪০-৫০ রান করা হয়, বাংলাদেশ তো কখনোই তা করতে পারেনি। বাংলাদেশের তিন শ পেরোনো ১১টি স্কোরের ৫টিই গত দুই বছরে হতে পারে, কিন্তু সর্বোচ্চ তো ‘মাত্র’ ৩২৯। ওভালের উইকেটে বোলারদের ভালো করার যে পূর্বশর্তের কথা বললেন মুশফিক, সেটিও তো অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে বেশি আর কোনো দল তা পূরণ করে না। ওদের পেস বোলারদের সবাই-ই তো এক্সপ্রেস গতির।
তার মানে কি খেলা শুরুর আগেই সব শেষ বলে মেনে নেওয়া? তা কেন হবে! ক্রিকেটকে যে ‘ফানি গেম’ বলা হয়, এটা তো নিশ্চয়ই জানেন।
No comments:
Post a Comment