Search

Banner ad

Friday, June 2, 2017

কলকাতার ঘাসের পাশাপাশি চীন থেকে ঘাসের বীজ আনার পরিকল্পনাও ছিল বিসিবির

দেশি ঘাসে সাশ্রয় কোটি টাকা

মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট মাঠে লাগানো হয়েছে নতুন ঘাস। আমদানি না করে দেশে উৎপাদিত ঘাস লাগানোর কারণে সাশ্রয় হয়েছে কোটি টাকা। ভবিষ্যতে সব মাঠে দেশীয় ঘাস লাগানোর কথাও ভাবছে কর্তৃপক্ষ l ছবি: প্রথম আলোআউটফিল্ড ও পানিনিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নয়নে মাঠের উপরিভাগ থেকে মাটি তুলে ফেলায় বদলে গিয়েছিল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মাঠের চেহারা। নতুন করে ঘাস রোপণে ধীরে ধীরে আগের চেহারা ফিরে পাচ্ছে ‘হোম অব ক্রিকেট’। দেশি ঘাস রোপণের কারণে সাশ্রয় হয়েছে বিসিবির কোটি টাকা।
গত জানুয়ারি থেকে শুরু হয় মাঠের সংস্কারকাজ। বিসিবির পরিকল্পনা ছিল, উপরিভাগ থেকে ছয় ইঞ্চির মতো মাটি তুলে মাঠের নিচে যেসব পাইপ বৃষ্টির পানি বাইরে সরিয়ে দেয়, সেগুলো পরিষ্কার ও মেরামত করা। এরপর নতুন করে বালু মাটি ফেলে ‘বারমুডা’ ঘাস লাগানো।
কিন্তু এই ঘাস আসবে কোত্থেকে? নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাঠে খেলা ফেরানোর তাড়া আছে। বিসিবি তাই পরিকল্পনা করে, কলকাতা থেকে আসবে মাঠের ঘাস। ঘাস যাচাই করতে গত মার্চে বিসিবির প্রধান কিউরেটর গামিনি সিলভা ও গ্রাউন্ডস বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক রতন কুমার যান ভারতে। তাঁরা ঘাসের নমুনা এনে দেখান বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটি ও মাঠ সংস্কারে যুক্ত বুয়েটের পরামর্শক দলকে।
পরামর্শক দলে থাকা বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়ামের সাবেক পরিচালক ড. মতিয়ূর রহমান ঘাস পরীক্ষা করে দেখে বিসিবিকে বলেন, এটা আর কিছু নয়, দূর্বা ঘাস। বাংলাদেশে যা সহজপ্রাপ্য।
ড. মতিয়ূর দ্রুত ২৪টি স্থানে জরিপ করে একটা প্রতিবেদন দেন। এর মধ্যে সবচেয়ে নিকটবর্তী হচ্ছে রায়েরবাজার বধ্যভূমি। উত্তর সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিয়ে বধ্যভূমির পেছন থেকে দূর্বা ঘাস এনে রোপণ করা হয় শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গফুট মাঠে। গত ২ মে শুরু হয় ঘাস রোপণ, যেটি শেষ হয় দুই সপ্তাহের মধ্যে। রোপণের পরই বৃষ্টি হওয়ায় তরতরিয়ে বেড়ে উঠছে ঘাস, ধীরে ধীরে ধূসর মাঠটা ঢেকে যাচ্ছে সবুজ আচ্ছাদনে।
দেশি ঘাস রোপণে বিসিবির সাশ্রয় হয়েছে কোটি টাকা। মাঠ সংস্কারকাজে যুক্ত বুয়েটের পরামর্শক ড. এ বি এম বদরুজ্জামান বললেন, ‘কলকাতা থেকে আনলে শুধু ঘাসেই খরচ হতো প্রায় ১ কোটি টাকা। এর সঙ্গে পরিবহন ও অন্যান্য খরচ তো আছেই। বিমানে রোল করে আনতে হতো। নার্সারি থেকে চারা ওঠানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোপণ করতে হতো। এতে কোনো রোগ-জীবাণু ছড়াতে পারে কি না, সেটিও পরীক্ষা করতে হতো। অস্ট্রেলিয়া বিশেষজ্ঞ দলও (মাঠ সংস্কারে বিসিবির বিদেশি পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান) জানিয়েছে, এই ঘাসটা ভালো। দেশি ঘাস রোপণ করতে শ্রমিকদের পেছনে যা ব্যয় হয়েছে, সেটি খুব বেশিও নয়।’
খরচটা ১০-১৫ লাখ টাকার বেশি হবে না বলে জানিয়েছে বিসিবি সূত্র। কলকাতার ঘাসের পাশাপাশি চীন থেকে ঘাসের বীজ আনার পরিকল্পনাও ছিল বিসিবির। কিন্তু সেটিতেও কিছু সমস্যা ছিল।
বিসিবির গ্রাউন্স কমিটির চেয়ারম্যান হানিফ ভূঁইয়া বলেন, ‘চীন থেকে বীজ এনে রোপণ করা, ঘাসের বেড়ে ওঠা—সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আর আমাদের আবহাওয়ায় ঘাস কেমন হবে, সেটি নিয়েও আছে অনিশ্চয়তা। এসবে হয়তো মাঠে খেলা ফিরতে অনেক দেরি হতো।’
হানিফ ভূঁইয়া বলেন, ‘এ ঘটনা থেকে আমরা শিখেছি। ভবিষ্যতে এসব জটিলতা এড়াতে কক্সবাজারে একটা নার্সারি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেখানে উৎপাদিত ঘাস আমাদের মাঠগুলোয় সরবরাহ করা হবে। বিশ্বের অনেক ক্রিকেট বোর্ডের নার্সারি আছে। তারা ঘাস রপ্তানিও করে। নিজেরাই ঘাস উৎপাদন করতে পারলে অনেক টাকা সাশ্রয় হবে আমাদের।’

No comments:

Post a Comment

চড়কা, চরকা